প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেছেন, জাতীয়
শিক্ষানীতির আলোকে দেশের প্রাথমিক
শিক্ষাস্তর হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রাথমিক
শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরে
পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী
শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা আর থাকবে না। তখন
অষ্টম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা নেয়া
হবে। বুধবার শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের নব-
গঠিত সংগঠন ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স
অ্যাসোসিয়েশেন, বাংলাদেশ (ইরাব)’ এর
কার্য নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে
সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পঞ্চম শ্রেণি শেষে ২০০৯ সালে প্রাথমিক
সমাপনী পরীক্ষা চালু করে সরকার। কোমলমতি
শিশুদের এই পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের দাবি
করে আসছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকের
শিক্ষা ক্ষেত্রে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন
পদক্ষেপের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চাকরি
অনিশ্চয়তায় থাকা ৪২ পুল ও প্যানেল শিক্ষকের
চাকরি স্থায়ী করেছে সরকার। প্রাক-
প্রাথমিকে ১৬ হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক
পরীক্ষা চলছে। ১১ হাজার শিক্ষক নিয়োগের
জন্য আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকের
শিক্ষক নিয়োগের স্বচ্ছতা ও মান সম্পর্কে
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, পাবলিক
সার্ভিস কমিশন(পিএসসি)’র অধীনে অনুষ্ঠিত
নিয়োগ পরীক্ষার চাইতে কোন অংশ কম নয়
প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মান।
তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ২০ লাখ কেন, দুই
কোটি টাকা দিয়েও প্রাথমিক শিক্ষকের
নিয়োগ নিশ্চিত করা যায় না। প্রাথমিক
শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে ২০ লাখ টাকা
লাগেÑসম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের এ বক্তব্যের বিষয়ে
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান
বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোনো ঘুষ
লেনদেন হয় না। ২০ লাখ কেন পারলে দুই কোটি
টাকা দিয়ে একজন প্রাথমিক শিক্ষকের
নিয়োগ অসম্ভব। মন্ত্রী বলেন, ৬৫ হাজার
সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ৪ লাখ শিক্ষক ও ৫০
হাজার কর্মী নিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষা
পরিবার। শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ১
কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত মান বৃদ্ধি পায়
সেদিকে নজর দিয়েছে সরকার। মন্ত্রীত্ব
গ্রহণের সময়ে ঝরে পড়ার হার ছিল ২০ শতাংশ।
যা এখন ১০ শতাংশের নীচে দাবী করে গত ৫
বছর যাবৎ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
একক দায়িত্বে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান
ফিজার বলেন, এখন খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী
ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়ার হার কমায় দেশে
শিক্ষিত মানুষের হার বাড়ছে। তিনি আরো
বলেন, পৌরসভা ও মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সব
শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির সুবিধা দেয়া হয়েছে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপবৃত্তি বিতরণ করা
হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদের
ইংরেজী শিক্ষার মান বাড়াতে বৃটিশ
কাউন্সিলের সহায়তায় বিশেস প্রকল।প চালু
করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর আওতায়
শিক্ষকরা বৃটেনে গিয়েও প্রশিক্ষনের সুযোগ
পাবেন। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলী
নীতিমালা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে
সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, বিভাগীয় শহরে
বদলি হওয়া যায় না। প্রাথমিকের শিক্ষক বদলি
নীতিমালা সংশোধরনের কাজ চলছে। এতে করে
শিক্ষকদে বদলির পথ সুগম হবে। সহকারি শিক্ষক
ও প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড আপগ্রেডটেশন করা
হবে বলে তিনি জানান। মন্ত্রী বলেন, দেশের
প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াডে সরকারি
প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। দুই কিলোমিটারের
মধ্যে স্কুল নেই এমন কোনো গ্রাম নেই। নতুন
করে কোনো স্কুলকে জাতীয়করণের পরকল্পনা
নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক স্কুলে
শারিরীক শিক্ষা ও চারুকলা বিষয়ে শিক্ষক
নিয়োগ দেয়া হবে। ঢাকার ৩শ সরকারি
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার মান উন্নয়নে ১৪শ
কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া
হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত
ছিলেন শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন
‘এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশেন,
বাংলাদেশ (ইরাব)’ এর সভাপতি সিদ্দিকুর
রহমান খান (দৈনিক শিক্ষা), সাধারণ সম্পাদক
সাব্বির নেওয়াজ (সমকাল), সহ-সভাপতি মুসতাক
আহমেদ (যুগান্তর) ও নিজামুল হক (ইত্তেফাক),
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম মামুন হোসেন
(মানবকণ্ঠ) ও আবদুল হাই তুহিন (সংবাদ
প্রতিদিন), কোষাধ্যক্ষ শরীফুল আলম সুমন
(কালেরকণ্ঠ), সাংগঠনিক সম্পাদক অভিজিৎ
ভট্টাচার্য (বাংলাদেশের খবর), দপ্তর সম্পাদক
শহীদুল ইসলাম (বিডিনিউজ) প্রচার ও প্রকাশনা
সম্পাদক নূর মোহাম্মদ (মানবজমিন), প্রশিক্ষণ ও
গবেষণা সম্পাদক আকতারুজ্জামান (বাংলাদেশ
প্রতিদিন), ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক
মুরাদ হোসাইন (জাগোনিউজ), নির্বাহী সদস্য
আমানুর রহমান

0 Comments