চলচ্চিত্রে জুটিবদ্ধ নায়ক-নায়িকা দেখতেই
পছন্দ করেন সিনেমাপ্রেমীরা। হলিউডের
ব্র্যাঞ্জেলিনা, বলিউডের শাহরুখ-কাজল এবং
ঢালিউডের সালমান শাহ-শাবনুরকে আজও মনে
রাখার কারণ হয়তো সেটাই। সালমান-শাবনুরের
অনেক কাল পর ঢালিউডে আবারও গড়ে উঠেছে
নতুন একটি জুটি। শাকিব-বুবলী। সম্প্রতি সেই
জুটিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা।
শাকিবের নতুন ছবির নায়িকা হচ্ছেন নুসরাত
ফারিয়া। এ খবর প্রকাশের পর চলচ্চিত্রের
একটি পক্ষ বলছে, তাহলে কী ভেঙে যাচ্ছে
শাকিব-বুবলীর জুটি?
বাংলাদেশের এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়
নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে সম্প্রতি জুটি
বাঁধলেন হালের আলোচিত নায়িকা নুসরাত
ফারিয়া। ‘শাহেনশাহ’ নামের নতুন ওই ছবিটি
পরিচালনা করবেন শামীম আহমেদ। ছবিতে
নুসরাত ফারিয়া ছাড়াও আরেকজন নায়িকা
অভিনয় করবেন। অক্টোবরে ছবিটির শুটিং শুরু
হওয়ার কথা রয়েছে।
চলচ্চিত্রের একটি পক্ষ যখন জুটি ভাঙার
শঙ্কায়, তখন শাকিব-বুবলী শুটিং করছেন
ব্যাংককে। সেখানে চলছে ঈদে মুক্তি
প্রতীক্ষিত ছবি ‘ক্যাপ্টেন খান’-এর শুটিং।
ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত এই ছবির গানের
শুটিংয়ের জন্য ৬ আগস্ট দল বেঁধে ব্যাংকক
গেছেন শাকিব-বুবলী। আগামীকাল সোমবার
তাঁদের দেশে ফেরার কথা। এরপর ছবিটি সেন্সর
ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়া হবে।
জুটি ভাঙার শঙ্কাকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে
দিয়েছেন শাকিব খান। মোবাইলে ব্যাংকক
থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুবলীই তো
এখনকার সুপারস্টার। তাঁর ছবি তো একের পর এক
সুপারহিট হচ্ছে। তাঁর ছবির গানগুলোও মানুষের
মুখে মুখে। এখানে জুটি ভাঙার প্রশ্ন এল
কেত্থেকে!’
দেড় যুগের অভিনয় জীবনে শাকিব খানের সঙ্গে
জুটি বেঁধে অনেকেই কাজ করেছেন। বেশির
ভাগ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে যাঁরা
নায়িকা হয়েছেন, সবাই আলোচনায় এসেছেন। এ
তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন শবনম বুবলী।
সংবাদ পাঠিকা থেকে চলচ্চিত্রে নাম
লেখানো বুবলী প্রথম ছবিতে নায়ক হিসেবে
পেয়েছেন শাকিব খানকে। ‘বসগিরি’ নামের
সেই ছবি আলোচিত হয়। এরপর শাকিবের সঙ্গে
জুটি বেঁধে অভিনয় করেন ‘শুটার’ ছবিতে।
‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’ ছবি দুটির পর শাকিব খানের
সঙ্গে জুটি হিসেবে সবচেয়ে বড় নির্ভরতার নাম
হয়ে উঠেছে বুবলী। এই জুটি পেয়েছে
জনপ্রিয়তা, গড়ে উঠেছে এই জুটির দর্শকও।
১৯৯৯ সালের ২৮ মে মুক্তি পাওয়া ‘অনন্ত
ভালোবাসা’ ছবি দিয়ে শাকিব খান জুটি
বাঁধেন ইরিন জামানের সঙ্গে। সোহানুর রহমান
সোহানের এই ছবি দিয়ে পর্দায় অভিষেক হলেও
একই বছরে শাকিব প্রথম ক্যামেরার সামনে
দাঁড়ান আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাই তো
সুখী হতে চায়’ চলচ্চিত্রে। এই ছবিতে শাকিবের
বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগত কারিশমা শেখ
নামের একজন নায়িকা। শাকিব ও ইরিনের প্রথম
ছবি ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সাফল্যের মুখ না
দেখলেও নায়ক শাকিব খান ঠিকই সবার নজর
কাড়তে সক্ষম হন।
১৯ বছর পরিশ্রমের পর শাকিব খান দেশের
সিনেমার এক নির্ভরতার নাম। দীর্ঘ অভিনয়
জীবনে অনেক নায়িকা তাঁর বিপরীতে নায়িকা
হয়ে পর্দায় এসেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে
আলোচিত জুটি হিসেবে শাকিবের সঙ্গে
দর্শকেরা অপুকেই বেশি দেখেছেন। গত এক
দশকে তাঁরা দুজন একসঙ্গে প্রায় ৬৫টিরও বেশি
ছবিতে অভিনয় করেছেন। এফ আই মানিক
পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ এ জুটির
প্রথম সিনেমা। শাকিব খানের নায়িকাদের
মধ্যে রয়েছেন মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা,
কেয়া, রত্না, মিম, বিন্দু, শখ, রোমানা, সিমলা,
মুনমুন ও ববি।
দেশের বাইরের নায়িকাদের মধ্যে শাকিবের
সঙ্গে অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা, শ্রাবন্তী,
পাওলি দাম, শুভশ্রী, পায়েল ও সায়ন্তিকা।
তবে শাকিবের ছবিতে ঘুরেফিরে একটি নাম
আছে, তা হচ্ছে বুবলী। নির্মাতাদের মধ্যে
যাঁরাই শাকিবকে নিয়ে ছবি করছেন, নায়িকা
হিসেবে বুবলীকেই চাইছেন তাঁরা। তাঁদের মতে,
শাকিব খানের সঙ্গে বুবলীই এখন সেরা পছন্দ।
তাঁদের ছবি মানেই দর্শকদের জন্য বাড়তি
আগ্রহের বিষয়।
এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের
চলচ্চিত্রে এক যুগ ধরেই শাকিব খানের ছবি
ব্যবসায়িকভাবে সফল। শাকিবের ছবি মানেই
প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের লাভ। সমিতির পক্ষে
সারোয়ার আলী ভূইঁয়া বলেন, আগে শাকিব
খানের সঙ্গে অপু বিশ্বাসের ছবি দর্শকেরা
দেখতে ছুটে আসতেন। দুই বছর ধরে সেই
জায়গাটা এখন শাকিব-বুবলীর।
নব্বইয়ের দশক থেকে এ দেশের চলচ্চিত্র
দাপিয়ে বেড়ানো নায়িকারা হলেন শাবনাজ,
শাবনূর, মৌসুমী, পপি ও পূর্ণিমারা। ২০০৬ সালে
আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবির মাধ্যমে
দেখা মেলে অপু বিশ্বাসের। আর ২০১২ সালে
জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবিষ্কার হিসেবে
ঢালিউডে আসেন মাহিয়া মাহী। তারপর
অনেকেই এসেছেন ক্ষণিকের আলো জ্বেলে,
আবার নিভু নিভু অবস্থানে চলে গেছেন। হঠাৎ
করেই জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে
পরিচালক শামীম আহমেদ রনি সবার সামনে
নায়িকা হিসেবে হাজির করালেন শবনম
ইয়াসমীন বুবলীকে। ২০১৬ সালে খান ফিল্মসের
ব্যানারের আবিষ্কার এই নায়িকাই এখন পর্যন্ত
শাকিবের জুটি হয়ে সমানতালে উপহার দিয়ে
যাচ্ছেন চমৎকার সব ছবি।
গত ঈদুল ফিতরে শাকিব-বুবলী জুটির দুটি ছবি
দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ছবিগুলো হচ্ছে
‘সুপারহিরো’ ও ‘চিটাগাংইয়া পোলা
নোয়াখাইল্লা মাইয়া’। এর বাইরেও বুবলী
অভিনীত ছবির মধ্যে আছে ‘রংবাজ’ ও
‘অহংকার’। চুক্তি হয়ে আছে শাকিব খানের
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ‘প্রিয়তমা’সহ নাম ঠিক
না হওয়া নতুন আরেকটি ছবি। এসব ছবির
কোনোটিতে বুবলীকে দেখা যাবে রোমান্টিক
নায়িকা হিসেবে, আবার কোনোটিতে অ্যাকশন
গার্ল হিসেবে।

0 Comments