• নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
• হামলার ভিডিওসহ পুলিশ সব তথ্য পেয়েছে।
• চার ছাত্রের জামিন আবেদন নাকচ।
• ছাত্রদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
এখনো পায়নি পুলিশ।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার
প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ২২
ছাত্রের মুক্তির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই
সংশ্লিষ্ট দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের কেউই জামিন
পাননি; বরং গতকাল রোববার আদালত
চারজনের জামিন আবেদন নাকচ করে
দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের অভিভাবকেরা
বলছেন, তাঁদের সন্তানেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত
ছিলেন না। পুলিশ কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই
তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। আর পুলিশ বলছে,
ছাত্ররা যে সহিংসতায় জড়িত ছিল তার প্রমাণ
তাদের হাতে রয়েছে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া
ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত
এমন কোনো তথ্য তারা পায়নি। স্থায়ী ঠিকানা
ধরে এখন এলাকায় তাদের বিস্তারিত খোঁজ
নেওয়া হচ্ছে।
৬ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা
ও আফতাবনগর এলাকায় নিরাপদ সড়কের
দাবিতে আন্দোলনে নামলে পুলিশের সঙ্গে
পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। ওই
দিন এই দুই স্থান থেকে বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪
ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেপ্তার
করে। গ্রেপ্তার ছাত্ররা বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ,
সাউথইস্ট, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী। পরদিন তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে
নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালত তাঁদের
কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ভাটারা থানার পুলিশ ১২ জন ছাত্রের নাম
উল্লেখ করে মামলা করে। এর মধ্যে ৮ জন
গ্রেপ্তার রয়েছেন। বাকি ৪ জন পলাতক।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা
উপপরিদর্শক হাসান মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন,
তদন্ত চলছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে
হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের
শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সব ধরনের
সহায়তা করছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে
তদন্তসংশ্লিষ্ট ভাটারা থানার একজন
কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নর্থ সাউথ
বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের বিভিন্ন
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা সিসি
ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন।
ফুটেজগুলোর মান ভালো হওয়ায় ওই দিন
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের
মুখাবয়বও স্পষ্ট দেখা যায়। এসব ধরে তাঁরা
একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করছেন। ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ
নেওয়া হবে।
বাড্ডা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুলহাস
মিয়া বলেন, রিমান্ডে শিক্ষার্থীরা পুলিশের
ওপর আক্রমণ এবং ভাঙচুরের কথা শিকার
করেছেন। তবে তাঁদের কোনো রাজনৈতিক
সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি এখনো তাঁরা
স্পষ্ট নন। প্রত্যেক ছাত্রের গ্রামের বাড়িতে
খোঁজ নেওয়ার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট থানায়
যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে তথ্য এলে
আরও অনেক কিছু জানা যাবে।
ছাত্রদের মুক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ
থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে
চাইলে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের
রেজিস্ট্রার মাশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে
বলেন, এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে কিছু জানায়নি।
আর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র
বেলাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সহায়তার
বিষয়ে অভিভাবকেরা তাঁদের সঙ্গে কোনো
যোগাযোগ করেননি। করলে আইনের আওতায়
থেকে যতটুকু সহায়তা সম্ভব তাঁরা করবেন।
পরিবার বলছে তাঁরা নির্দোষ
গ্রেপ্তার ছাত্রদের অভিভাবকেরা বলছেন,
তাঁদের সন্তানেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন
না। পুলিশ তাঁদের কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া
গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্র
সাবের আহমেদের মা মির্জা শাহিনা প্রথম
আলোকে বলেন, ঘটনার দিন সাবের খেতে
বাইরে গেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আরেক ছাত্র আমিনুলের মা বিলকিস বলেন,
পুলিশ অযথা তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
মুশফিকের বাবা মাহবুবুর রহমান বলেন, তাঁর
ছেলেসহ কয়েকজন ছাত্র গলায় কার্ড ঝুলিয়ে
মেসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিলেন। এ
সময় ছাত্রলীগের একদল ছেলে তাঁদের ধরে
পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাঁদের
গ্রেপ্তার করে। রাশেদুলের চাচা আক্কাস
আলী বলেন, ঘটনার পর রাশেদুল রাস্তায়
দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে
যায়।
রেদোয়ানের বাবা আবুল কালাম আজাদ প্রথম
আলোকে বলেন, রেদোয়ান ক্লাস শেষে বের
হয়ে রাস্তায় আসার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার
করে। আটক হওয়া শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলামের
মা তাসলিমা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর
ছেলে আন্দোলনে ছিলেন না। বিকেল চারটা
পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ছিলেন। চারটার পর তিনি
নিজে ছেলেকে বের হতে বলেন। এ সময় বের
হয়ে বাসার দিকে আসার চেষ্টা করলে পথ
থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
চারজনের জামিন নাকচ
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে জামিন
নাকচ হওয়া চার ছাত্র হলেন ইস্ট ওয়েস্ট
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেদোয়ান আহমেদ ও তারিকুল
ইসলাম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসাদ
মর্তুজা বিন আহাদ ও আজিজুল করিম। এর আগে
গত বৃহস্পতিবার অপর ১৮ জন ছাত্রের জামিন
আবেদন নামঞ্জুর করেন একই আদালত। ২২
ছাত্রের আইনজীবী বলছেন, আবারও জামিনের
জন্য আবেদন করা হয়েছে। ঈদের আগে শুনানি
করতে চান।
রেদোয়ান আহমেদের আইনজীবী কবির হোসাইন
প্রথম আলোকে বলেন, রেদোয়ানের বাবা
একজন অধ্যাপক। তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক।
কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন
করেছে।
আদালত সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী মাসাদ মর্তুজা
বিন আহাদের আইনজীবী কামরুদ্দিন জামিন
শুনানিতে আদালতে বলেন, আহাদকে বিনা
অপরাধে ধরে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করেছে।
এখন অসুস্থ। কারাগারে থাকলে তাঁর
শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হবে।
বাড্ডা থানা-পুলিশ ছাত্রদের বিষয়ে
আদালতকে জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ তাঁরা
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের তথ্যের
ভিত্তিতে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে
অভিযান চলছে। আর ভাটারা থানা-পুলিশ
আদালতের কাছে দাবি করে, গ্রেপ্তার
আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা করার কথা
প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

0 Comments